সেলিম সানোয়ার পলাশ, রাজশাহীঃ “সব কামাদের দোকান বন্ধ, নতুন কাস্তে বানাবো, আর পুরানগুলোই কি ভাবে মেরামত করবো! কাস্তে না থাকলে কেমন করে ধান কাটবো” এমনি করে কথাগুলো বলছিলেন রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার পিরিজপুর গ্রামের কৃষি শ্রমিক দুলাল। উপজেলার বোগদামারী এলাকার কৃষক লালু বলেন, করোনায় সব কিছুই তো বন্ধ রয়েছে। শ্রমিকরা কাস্তে বানাতে পারলে ধান কাটবে কিভাবে। সকল কামারশালা যেমন বন্ধ রয়েছে, তেমনি ধান কাটার শ্রমিকেরও সঙ্কট রয়েছে। এদিকে কোরনা ভাইরাস ও যান চলাচল বন্ধ থাকায় বাহিরের শ্রমিকরা আসতে চাচ্ছেনা। কিভাবে যে ধান ঘরে তুলব সে চিন্তাই অস্থির আমরা। করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে গোদাগাড়ী উপজেলায় লকডাউন চলছে। ফলে দোকানপাট বন্ধ। কৃষিশ্রমিকেরা ঘরবন্দী। দোকান বন্ধ থাকায় চাষিরা সার ও কীটনাশক কিনে বোরো খেতে ছিটাতে পারছেন না। শ্রমিকের অভাবে খেতে সেচও বন্ধ। এসব কারণে এ মৌসুমে বোরোর প্রত্যাশিত উৎপাদন নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন চাষিরা। আসছে বৈশাখ মাস। পাকতে শুরু করেছে বোরো ধান। সঙ্কটে রয়েছেন কৃষকরা। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে দোকানপাঠ বন্ধের তালিকায় কামারশালাগুলোও রয়েছে। এতে কাটা-মাড়াই উপকরণ সংগ্রহ করতে হিমশিম খাচ্ছে কৃষক শ্রমিকরা। স্বপ্নের ফসল ঘরে তোলা নিয়ে শঙ্কায় দিন কাটছে কৃষকদের। গোদাগাড়ী উপজেলার কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলাটিতে মোট ফসলী জমি ৩৯ হাজার ৪৯৯ হেক্টোর। চলতি বোরো মৌসুমে গোদাগাড়ী উপজেলায় ১৩ হাজার ৪’শ ৮৫ হেক্টর জমিতে ধানের চাষ করা হয়েছে।
আধুনিক যন্ত্রপাতির অপ্রতুলতায় চাষাবাদ থেকে শুরু করে কাটা-মাড়াই পর্যন্ত এ অঞ্চলের কৃষক শ্রমিকগণ মধ্যযুগীয় যন্ত্রপাতি নির্ভর। কাস্তের মতো সাধারণ অতীব প্রয়োজনীয় এসব সামগ্রির প্রধান উৎস কামারশালা। মেরামত বা কাজের উপযোগি করতেও একমাত্র সমাধান কামারশালা। কৃষি শ্রমিক উপজেলার লালমাটিয়া গ্রামের বিমল জানান, জমিতে ধান কাটতে যাব ক্যামনে, আমার ধান কাটা কাঁচি (কাস্তে) তো নষ্ট হয়ে আছে। কামারের দোকান বন্ধ। হাট বাজারও বন্ধ। ঘরে যেইটা আছে সেটা মেরামত করার ব্যবস্থা নাই। মাড়াই কল মালিক কাজিম বলেন, এক বছর যাবৎ মাড়াইকল পড়ে আছে। দাঁতমাত ভোঁতা হইয়া গেছে। কিছু কামকাজ না করালে মাড়াইকল নিয়ে মাঠে গেলে কি হবে। কামার আর ওয়ার্কসপ বন্ধ। ঠিক করবার লেগে দৌড়ছি। পিরিজপুর এলাকার কানাই চন্দ্র কর্মকার বলেন, যারা দোকান খুলে তাদেরকেই জরিমানা করে। গরীব মানুষ আমরা। দিন আনি দিন খাই। দোকান বন্ধ। যে অবস্থা চলছে তাতে ঘরে কোন খাবার নাই,দোকাল খুলে জরিমানা দিব কেমন করে। তবে কৃষক শ্রমীকদের দাবি কিছু সময়ের জন্য যেন কামারশালা খুলার ব্যবস্থা করেন প্রসাশন। যাতে করে কৃষি উপকরন গুলো ঠিক করে জমির ধান কাটতে পারি।